
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ঘোষিত হয়েছে, ভবিষ্যতে আর কোনও নতুন মাঠ জরিপ করা হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে’ (BDS) হবে দেশের সর্বশেষ রেকর্ড। এই জরিপের মাধ্যমেই সব তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হবে এবং নতুন করে আর কোনো জরিপ বা রেকর্ড কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রয়োজন হবে না।
অতীতে কেন জরিপ অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল?
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্রিটিশ আমলে পরিচালিত সিএস (Cadastral Survey) ছিল একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জরিপ। পাকিস্তান আমলে শুরু হওয়া এসএ জরিপ এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগে করা আরএস ও বিএস জরিপগুলো ব্যয় সংকট ও কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে পুরোপুরি সম্পন্ন করা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই এসব জরিপ মাঝপথে অসমাপ্ত থেকে যায়, ফলে জমির মালিকানা নিয়ে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়।
বিডিএস: সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত ভূমি রেকর্ড
সরকার বলছে, বিডিএস জরিপ হবে ‘পোলার টু পোলার’— অর্থাৎ জমির প্রতিটি অংশ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে রেকর্ড করা হবে। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, স্যাটেলাইট ও ডিজিটাল স্ক্যানিং ব্যবহার করে সরাসরি মাঠপর্যায়ে গিয়ে রেকর্ড প্রস্তুত করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। পুরো প্রক্রিয়াটি হবে সম্পূর্ণ অটোমেটেড, যেখানে এনালগ কোনো পদ্ধতি আর ব্যবহার করা হবে না।
ছয় মাস পরপর অটোমেটিক আপডেট!
বিডিএসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— জমির মালিকানা ছয় মাস পরপর আপডেট হবে। জমি ক্রয়-বিক্রয় হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে খতিয়ানে নতুন মালিকের নাম যুক্ত হবে এবং আগের মালিকের নাম থেকে সেই জমির পরিমাণ বাদ পড়বে। এ জন্য প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আলাদা করে কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ করা হবে, যাদের কাজ হবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপডেট তথ্য যুক্ত করা।
যৌথ খতিয়ান থাকবে না, এক মালিক এক দাগ
আরেকটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হলো— ভবিষ্যতে যৌথ খতিয়ানের অবসান ঘটবে। এখন থেকে একজন মালিকের নামে একটি দাগ থাকবে। তিনি ৫ শতক জমির মালিক হোন বা ৫০ শতকের— প্রত্যেকেই পাবেন আলাদা দাগ নাম্বার। পরিবারভিত্তিক বন্টন না থাকলে নামজারি হবে না— এমন সমস্যাও থাকবে না। এতে করে জমি ব্যবস্থাপনা আরও সহজ, স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য হবে।
সতর্কতা: রেকর্ডের সময় ভুল হলে ভোগান্তি
সরকার সতর্ক করেছে, বিডিএস জরিপ চলাকালে ভুল হলে পরবর্তীতে রেকর্ড সংশোধন করা অত্যন্ত কঠিন হবে। এমনকি প্রকৃত মালিক হয়েও অনেকে জমির মালিকানা রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। এজন্য সকল জমির মালিককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, জরিপ শুরুর আগে জমির সকল বৈধ দলিল প্রস্তুত রাখতে হবে।
বিশেষভাবে প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে সরকার বলেছে, জরিপ চলাকালে নিজের অনুপস্থিতিতে যেন কেউ একজন বিশ্বস্ত প্রতিনিধি মনোনীত করেন, যিনি তার জমি যথাযথভাবে রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
সূত্রঃ